মেরিন ড্রাইভ সংযোগ সড়ক পুনর্নির্মাণে ধীরগতি

আবদুল আজিজ, বাংলা ট্রিবিউন :

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের কলাতলী সংযোগ সড়ক পুনর্নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়েও শেষ করতে পারেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। এ কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন ওই সড়কে চলাচলকারী স্থানীয় মানুষ ও দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। বেহাল সড়কের কারণে ইনানী ও হিমছড়ির হোটেলগুলোতে যাচ্ছে না কোনও পর্যটক। এর প্রভাব পড়ছে পর্যটন শিল্পে। এছাড়া বিকল্প সড়ক হিসেবে এক কিলোমিটার সৈকতের উপর দিয়ে যান চলাচলের কারণে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। সংযোগ সড়কটি তিন মাসের মধ্যে পুনর্নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও মাত্র ২৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সামনে বর্ষায় কাজ শেষ না হলে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া আসন্ন ঈদে কক্সবাজারে প্রচুর পর্যটক আসে। সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ না হলে চরম ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে গড়া উঠা হোটেল, মোটেল ও রিসোট মালিকরা। কাজে ধীরগতি, পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, বারবার নকশা পরিবর্তন ও নানা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হলেও পৌর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন বলছে, সড়কের পুনর্নির্মাণ কাজ চলতি মাসেই শেষ হবে।

কক্সবাজারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হচ্ছে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক। কক্সবাজার শহরের কলাতলী সংযোগ সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় পুনর্নির্মাণের কাজ হাতে নেয় কক্সবাজার পৌরসভা। নিয়ম অনুযায়ী কোনও সড়কের পুনর্নির্মাণ করতে হলে যান চলাচলের জন্য বিকল্প সড়ক তৈরি করা হয়। কিন্তু কোনও ধরনের বিকল্প সড়ক তৈরি না করে হঠাৎ করে যানচলাচল বন্ধ করে দিয়ে সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। এর এক মাস পর হিমছড়িতে অবস্থানরত সেনাবাহিনী কলাতলী মোড়ের সায়মন বিচ পয়েন্ট হয়ে সাগরের বালি চরের উপর দিয়ে ভেলী হ্যাচারি পর্যন্ত বিকল্প যানচলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু তা সাময়িক। সাগরে জোয়ার আসলে যানচলাচল বন্ধ আর ভাটার সময়  যান চলাচল করে। এ কারণে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে চলাচল করা পর্যটকদের পাশাপাশি শহরের কলাতলী, দরিয়ানগর, রামুর হিমছড়ি, উখিয়ার সোনারপাড়া, ইনানী, মনখালী, টেকনাফের শামলাপুর, বাহারছড়ার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।

কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভের সঙ্গে শহরের একমাত্র সংযোগ সড়কটি সংস্কারের জন্য গত ফেরুয়ারি মাসের শুরু থেকে বন্ধ রয়েছে। ফলে দুর্ভোগ বেড়েছে সড়ক ব্যবহারকারীদের। ইনানী হিমছড়ির পর্যটন ব্যবসায় দেখা দিয়েছে মন্দাভাব। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্রের তীর ধরে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেরিন ড্রাইভ সড়কটি ২০১৭ সালের ৬ মে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু মেরিন ড্রাইভের শুরুর দিকে কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে ভেলি হ্যাচারি মোড় পর্যন্ত প্রায় ১৩ শ মিটার সড়ক ২০০০ সালে সামুদ্রিক ভাঙনে বিলীন হয়ে গেলে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২০০৫-০৬ সালে কলাতলী গ্রামের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া সড়কটিকে সামান্য প্রশস্ত করে মেরিন ড্রাইভের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লে পৌর কর্তৃপক্ষ সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে চলতি এপ্রিল মাস পর্যন্ত তিন মাসের জন্য কলাতলীর গ্রামীণ সড়কটি সংস্কারের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় পৌর র্কতৃপক্ষ। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে সড়কটি বন্ধ করে দেওয়া হলে শহরের সঙ্গে মেরিন ড্রাইভ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ মেরিন ড্রাইভের বেইলি হ্যাচারি পয়েন্ট থেকে সমুদ্র সৈকতে ওঠানামার একটি বিকল্প পথ তৈরি করে। একইভাবে কলাতলী পয়েন্টেও মাটি দিয়ে একই ধরনের পথ তৈরি করা হয়। কিন্তু সমুদ্র সৈকত ধরে এ সড়কে যানবাহন চলাচল নির্ভর করছে সমুদ্রের জোয়ার ভাটার উপর। প্রতিদিন দুইবার সামুদ্রিক জোয়ারের সময় ৪-৫ ঘণ্টা করে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের ক্ষতি হচ্ছে। ফলে শহরের একাংশের হাজার হাজার মানুষের জন্য যানবাহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে। এছাড়া সমুদ্র সৈকতে চলাচল করতে গিয়ে সামুদ্রিক জোয়ারের ধাক্কায় প্রতিদিন দুর্ঘটনাও ঘটছে। এ অজুহাতে যাত্রীবাহী অটোরিক্সা ও ইজিবাইকগুলো গাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ী, দেশি-বিদেশি পর্যটক, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত এনজিও কর্মী ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, বর্তমানে এই সড়ক পথে হাজার হাজার পর্যটক ছাড়াও প্রতিদিন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলাচলকারী দেশ-বিদেশের প্রতিনিধি ও স্থানীয় মানুষ চলাচল করেন। বেহাল সড়কের কারণে ইনানী হিমছড়ির হোটেলগুলোতে যাচ্ছে না কোনও পর্যটক। এর প্রভাব পড়ছে পর্যটন শিল্পে।

কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, ‘পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এই সংযোগ সড়কটি তিন মাসের মধ্যে পুনর্নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা বললেও এখনও শতকরা ৩০ ভাগ কাজ শেষ করতে পারেনি। সামনে বর্ষাকাল, সাগরে পানি বেড়ে যাবে। এতে সকাল-বিকাল যেসব গাড়ি চলতো সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। বিশেষ করে আসন্ন ঈদে কক্সবাজারে প্রচুর পর্যটক আসে। সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ না হলে চরম ক্ষতির মুখে পড়বে মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে গড়া উঠা হোটেল, মোটেল ও রিসোট মালিকরা।

কক্সবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন,কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সংযোগ সড়কটির শতকরা ২৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজগুলো আগামী বর্ষার আগেই শেষ করা হবে। সড়কটির নির্মাণকাজ একটু দেরিতে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে কোনও সড়কের কাজ যেন দুর্বল না হয়। তাই আমরা সড়কটি এমনভাবে করতে চাই যাতে করে আগামী ১০০ বছরেও কিছু না হয়। সেভাবে খুব শক্ত করে কাজটি করার জন্য বলা হয়েছে এবং নিজে গিয়ে তদারকি করছি যাতে কোন অনিয়ম না হয়।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, কলাতলী মেরিন ড্রাইভ সংযোগ সড়কটির পুনর্নির্মাণ কাজ চলছে। দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কক্সবাজার পৌরসভা এই কাজটি করছে। কাজটি খুব দ্রুত শেষ হবে বলে তারা আমাকে জানিয়েছে।